নগরের চকবাজার কাপাসগোলায় হিজড়া খালে নিখোঁজ ছয় মাসের শিশু শেহরিজের মরদেহ প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চামড়ার গুদাম এলাকায় চাক্তাই খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উদ্ধারের সময় শেহরিজের একটি হাত উপরের দিকে ছিল। দূর থেকে এ হাত দেখে তারা প্রথমে পুতুল মনে করেন। পরে নিশ্চিত হতে খালে নেমে দেখতে পান কাদায় মাখা শেহরিজের মরদেহ। এরপর উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে।
জানা গেছে, মরদেহ যেখানে পাওয়া গেছে তার অদূরে আছদগঞ্জের শুটকি পল্লীর মসজিদ গলির ইব্রাহীম সওদাগর ভবনে থাকে শেহরিজের পরিবার। এটি তাদের নিজস্ব বাসা। গতকাল সকালে ওই বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মো. শহীদ ও উম্মে সালমা দম্পত্তির একমাত্র সন্তান শেহরিজ। ‘বুকের ধন’ হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন উম্মে সালমা। শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন শেহরিজের বাবা। বারবার বিলাপ করছিলেন শেহরিজের ফুফু ও দাদি।
শেহরিজের মামা (শহীদের বোনের জামাই) শাওন মারুফ তুহিন সাংবাদিকদের জানান, শেহরিজের মা, দুই ফুফু ও দাদি দফায় দফায় অচেতন হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসার জন্য তাদের হাসপাতালেও নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ঈদের একদিন পর শেহরিজের ছয় মাস পূর্তিতে বাসায় কেক কাটা হয়েছিল। সে ছিল পরিবারের সবার আদরের। তার মৃত্যু পরিবারের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে
ফুফুর বাসায় যাওয়া হয়নি : ফুফুর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল শেহরিজের। আছদগঞ্জের নিজ বাসা থেকে দাদি ও মায়ের সঙ্গে কাপাসগোলা ফুফুর বাসায় যেতে সিএনজি টেঙিতে করে রওনা হন গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে। কাপাসগোলা নবাব হোটেলের পাশে হিজড়া খালের অংশে স্থানীয় একটি উন্মুক্ত নালা সংলগ্ন সরু গলি দিয়ে যেতে হয় শিশুটির ফুফুর বাসায়। গলিতে পানি থাকায় টেঙি যাচ্ছিল না। তাই টেঙি থেকে নেমে একটি রিকশায় উঠেন শেহরিজের মা ও দাদি। মায়ের কোলেই ছিল শেহরিজ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পানিতে নালা ও রাস্তা একাকার হয়ে যায়। পানির স্রোতও ছিল এ সময়। প্রায় হাঁটু পানি মাড়িয়ে যাওয়ার সময় রিকশাটি পড়ে যায় খালে। এ সময় স্থানীয় ও পথচারীরা শেহরিজের মা ও দাদিকে উদ্ধার করলেও নিখোঁজ হয় শেহরিজ। গতকাল তার লাশ পাওয়া যায় বাড়ির অদূরে। ফলে ফুফুর বাসায় আর যাওয়া হলো না শেহরিজের।
শেহরিজের ফুফুর জামাই শাওন মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, আছদগঞ্জ থেকে শেহরিজকে নিয়ে তার মা ও দাদি আমার বাসায় বেড়াতে আসছিলেন। বাড়ির কাছে এসে রাস্তায় পানি থাকায় রিকশা নেন তারা। কিন্তু নালার পাশে থাকা বাঁশের বেষ্টনী খুলে ফেলার কারণে তারা রিকশা নিয়ে নালায় পড়ে যায়। পরে শেহরিজের মা ও দাদিকে উদ্ধার করা গেলেও শেহরিজ হারিয়ে যায়।
এদিকে খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। রাতে চসিকের এস্কেভেটর দিয়ে খাল থেকে রিকশাটি তোলা হয়। এ কার্যক্রম মনিটরিং করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। লাশ উদ্ধারের পরও শেহরিজের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে যান তিনি।
জানা গেছে, রাতভর চেষ্টা করেও সন্ধান মিলেনি শেহরিজের। গতকাল সকাল থেকে আবারও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে যোগ দেয় নৌ–বাহিনীর ডুবুরি দলও। উদ্ধার কার্যক্রম চলার মধ্যেই খবর আসে শেহরিজের মরদেহ পাওয়া গেছে।
প্রথমে পুতুল মনে করি : শেহরিজের মরদেহ প্রথম দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল। তিনি বলেন, আমি আমার মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে খালে বাচ্চার লাশ দেখি। প্রথমে পুতুল মনে করেছিলাম। কিন্তু আমার মন মানছিল না, তাই খালে নামলাম। নেমে দেখি সত্যি সত্যি বাচ্চার লাশ। তখন আমার পুরো শরীরে কাঁপুনি এসে যায়। ভয়ে তুলতে পারিনি। এরপর লোকজন জড়ো হলে লাশ তোলা হয়।
খাল থেকে শিশুটির মরদেহ তুলে আনা যুবক মো. মিজান বলেন, আমরা তিনজন একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। তখন একটি লোক এসে বলে, ওখানে একটি বাচ্চার হাত দেখা যাচ্ছে। তখন আমি, রহমান ও দিদার সওদাগর একসঙ্গে ছিলাম, তিনজনই দৌড় দিয়েছি। এসে দেখলাম আসলেই বাচ্চার হাত দেখা যাচ্ছে। পরে নেমে বাচ্চাটা তুলে আনি। এ সময় বাচ্চাটার গায়ে কাদা মাখা ছিল। মুখে ফেনা ছিল। আমি সেগুলো মুছে দিই। এরপর তুলে এনে ২০ লিটার পানি দিয়ে পুরো শরীর ধুয়েছি।
দুই দফা জানাজা শেষে দাফন : গতকাল বাদে জোহর আছদগঞ্জে জানাজা হয় শেহরিজের। বিকাল ৩টায় বাকলিয়া বজ্রঘোনায় আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।i
সংগৃহীত।
No comments:
Post a Comment