Sunday, 29 December 2024

নববী আদর্শে জীবন সাজাই


 পরিতাপের সাথে বলতে হয় আমরা শেষ নবীর উম্মত হয়েও তাঁর মুহাব্বত দিলে লালন করি না। অথচ আল্লাহ কুরআনে বলেন, ‘নবী মুমিনদের কাছে নিজের চেয়ে বেশী প্রিয় হবেন।’ -সুরা আহযাব: ৬

আমরা মুখে খুব সহজে বলে ফেলি সব থেকে বেশি আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসি। তবে আমাদের চলাফেরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশমত না। বরং পশ্চিমাদের মত করে চলাফেরা করি হারদাম।  আর কেউ যদি দ্বীনের উপর চলেও থাকি তবুও আমাদের চলাফেরা হয় জায়েজের উপর। সুন্নাতের উপর আমরা চলাফেরা করি না। আমাদের পোশাক, চুল, দাড়ির দিকে তাকালেই দেখা যায় মনচাহি সব উদ্ভট আকৃতিতে সজ্জিত। আলেম সমাজও পিছিয়ে নেই টাইট ফিটিং পাঞ্জাবি জুব্বায়। অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমার সুন্নত ভালোবাসে সে আমাকেই ভালোবাসে আর যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।’ -তিরমিজি: ২৬৭৮

আজকে যদি আমাদের দাম্পত্য জীবনের দিকে তাকাই তাহলেই দেখি, দুঃখ দুর্দশা হতাশা। কিন্তু কেন? কারণ একটা আমরা আল্লাহ আল্লাহর রাসূলের দেখানো পথ ছেড়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরেছি। আমরা আমাদের ছোট থেকে ছোট বিষয় স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করছি। সুখ শান্তি প্রকাশ করে নজর লাগাচ্ছি। আর পরিণামে নেমে আসছে ভয়াবহ বিচ্ছেদ। তারপর হতাশায় ভুগছি। বিবাহকে ঘৃণা করছি। এবং বন্ধু বান্ধবীকে বিবাহ করতে বাধা দিচ্ছি। বিবাহ করলে জীবন শেষ হয়ে যাবে ইত্যাদি বলছি। অথচ সুন্দর জীবন তো আমরাই নষ্ট করলাম। 

আল্লাহ পাক বিবাহে উৎসাহ প্রদানে বলেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ।’ -সুরা আন-নুর: ৩২

আমাদের মধ্যে খোদাভীতি নেই। আমরা গোনাহ করতে দুইবার ভাবি না। আমরা আল্লাহর ভয়ে নিজেকে সংযত রাখি না। আমরা আমাদের সঙ্গী সঙ্গিনী চোখের আড়াল হলেই কোনো না কোনো গোনাহে জড়িয়ে পরি। এতটুকু ভাবি না আমরা একে অপরের হক্ব নষ্ট করছি। আর এভাবেই আমাদের চারদিকের সমস্ত সম্পর্ককে আমরা বিষাক্ত করে তুলেছি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুক আমীন।

‘পুরুষরা মহিলাদের পরিচালক।’ -সুরা নিসা: ৩৩

আল্লাহ তাআলা পুরুষকে মহিলার উপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। কিন্তু এখনকার অনেক নারীরাই এটাকে পরাধীনতা মনে করে। অথচ একটু খেয়াল করে ভাবলেই দেখা যায় এটা কখনোই পরাধীনতা নয়। বরং একজন নারীর জন্য এটা সম্মানের। সব সময় একজন পুরুষ নারীকে হেফাজত করছে। কোনো ভারি বোঝা নারীকে বহন করতে হচ্ছে না। পুরুষের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে ঘরের জন্য সে খাদেমা রেখে দিচ্ছে। সর্বোপরি একজন উত্তম পুরুষ একজন নারীকে রানী বানিয়ে রাখে। নারীকে অবমূল্যায়ন করে কাপুরুষ।

একজন নারী যেমন চায় তার স্বামী উত্তম আখলাক ওয়ালা হোক তেমনি একজন পুরুষও তেমন চায় তার স্ত্রী উত্তম আখলাক ওয়ালী খোদাভীরু সচ্চরিত্রবান লাজুক স্বভাবের হোক। একটা সুন্দর সম্পর্কের জন্য অবশ্যই নারীর অবদান বেশি থাকে এবং বেশি থাকতে হয়। নারীর মধ্যে স্বভাব সুলভ আল্লাহ এই গুণ দিয়েছেন। একজন নারীর সব সময় মনে রাখা উচিত, [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ ব্যতীত যদি অন্য কাউকে আমি সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে তার স্বামীকে সিজদা করার অনুমতি দিতাম। -তিরমিজি: ১১৫৯

এখানে ভেবে দেখা উচিত একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে কতোটা মূল্যবান হলে তাকে সেজদার আদেশ দিতেন আল্লাহর নবী সা. এতটুকু মনে রেখে হলেও স্বামীকে সম্মান মোহাব্বত করা জরুরী। 

একজন নারীর অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও কিছু কারণে সংসার ভেঙে না গেলেও তা সুখের হয় না। যেমন, স্বামী স্ত্রীকে পর্যাপ্ত সময় দেয় না। তার সব কিছুর জন্য সময় হলেও স্ত্রীর জন্য সময় হয় না। স্ত্রী বেচারি সারাদিন স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে আর স্বামী ঘরে এসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে ফোন চাপতে চাপতে ঘুমিয়ে যায়। 
স্ত্রীর ছোট ছোট শখকে অপচয় বা বোঝা মনে করে। (স্ত্রীরও খেয়াল রাখতে হবে স্বামীর আর্থিক অবস্থার দিকে) প্রতি মুহূর্তে স্বামী অন্য নারীর প্রশংসা করা বা অন্য নারীতে আসক্ত থাকা। আল্লাহ হেফাজত করুন আমীন।

এখন আমাদের সমাজে আরেকটা ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে, বড়রা ছোটদের স্নেহ করে না এবং ছোটরা বড়দের সম্মান করে না। নবী করীম সা. বলেছেন, ‘সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয় যে ছোটকে স্নেহ এবং বড়কে সম্মান করে না।’ -তিরমিজি: ১৯১৯

আমরা এই নবীর উম্মত হয়ে কিভাবে পারছি বড়দের সম্মান না করতে এবং ছোটদের স্নেহ না করতে? ভুল থেকে ভুল করা নয়। আমাদের উচিত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সংশোধন হয়ে সঠিক কাজটি করা। কখনো যদি আমাদের সাথে ছোটরা খারাপ আচরণ করে তখন আমাদের উচিত তাদের সাথে অনেক ভালো আচরণ করা। দুআ মেহনত আর নেক নিয়তে খোদা পরিবর্তন এনে দিবেন ইনশাআল্লাহ। 

আমাদের জীবনের সুন্দর পরিবর্তন সম্ভব ই কোরআন এবং হাদীসে দেখানো পথ অনুযায়ী চলা। সুখ শান্তি বরকত সব রয়েছে এই পথে। কখনো সম্ভব না ভুল রাস্তায় থেকে সুখের জীবন পাওয়া। আমরা নিজেদের কর্মের কারণে দুঃখ কষ্ট জীবনে বয়ে আনি আর দোষটা দেই ভাগ্যের। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন আমীন।
আল্লাহুমাগফিরলী।

No comments:

Post a Comment

Search This Blog

Powered by Blogger.