বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সন্দেহ করে গুজব ছড়িয়ে কিংবা জনমনে ক্ষোভ তৈরি করে সংঘটিত কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে তিন বছরের কন্যার সামনে বাবাকে গণপিটুনির পাশাপাশি চোর সন্দেহে পিটিয়ে দুই ভাইকে মেরে ফেলার মতো ঘটনাও ব্যাপকভাবে আলোচনায় এসেছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসেবে, গত বছর অগাস্ট থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত অন্তত ১১৯ জনের মৃত্যুর হয়েছে গণপিটুনিতে। ২০২৪ সালে এ ধরনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৭৯ জনের, যা এই দশকের মধ্যেই সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন বা এমএসএফ বলছে, মার্চ মাসে গণপিটুনির ৩৯টি ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত ও ৫৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো ১৮টি। আর জানুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলো ২১ জন।
এমএসএফ এর নির্বাহী পরিচালক ও আইনজীবী সাইদুর রহমান বলছেন, গণপিটুনির প্রবণতা আবার বেড়েছে। তিনি মনে করেন, এর কারণ হলো পুলিশি কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা এবং এসব ঘটনার পর দৃশ্যমান জোরালো পদক্ষেপ না থাকা।
"পুলিশ প্রশাসন ততটা সক্রিয় না। আবার অনেকে ভাবে গণপিটুনি দিলে কোন কিছু হয় না বা এসব ঘটনার বিচার হয় না। আর মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় সরকার না থাকারও একটা প্রভাব পড়ছে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ডঃ তৌহিদুল হক বলছেন, গণপিটুনির ক্ষেত্রে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সফলতা একেবারেই জিরো।
"এটাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে জোরালো ব্যবস্থা না নেয়া , অর্থাৎ আইনের প্রয়োগ ঘাটতির কারণেই গণপিটুনির ঘটনা বাড়ছে," বিবিসি বাংলাকে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মি. হক।
পুলিশ অবশ্য বলেছে, কোথাও কোন ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং একই সঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশী কার্যক্রম জোরদার হয়েছে।
এর আগে পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো কেউ অন্যায় করলে বা অপরাধী হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তির বিচারের বিধান রয়েছে, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।
"কোনো ব্যক্তি অন্যায় এবং অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না," ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো।
No comments:
Post a Comment