Saturday, 12 April 2025

বাঙালির পাতে কি ইলিশ উঠবে পহেলা বৈশাখ মাছ কম ধরা পড়া, সরবরাহে অপ্রতুলতা, সিন্ডিকেটের কারসাজি ও বেশি দাম


 সাগরে মাছ কম ধরা পড়াসরবরাহে অপ্রতুলতাসিন্ডিকেটের কারসাজি এবং প্রচুর দামের কারণে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে বাঙালির পাতে এবার ইলিশ না ওঠার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী পান্তাইলিশের আয়োজন বাংলা নববর্ষের উৎসবের অপরিহার্য অংশ হিসেবে পরিগণিত হলেও চলতি বছর ইলিশ সংকট প্রকট। মাছবাজারের পাশাপাশি সুপার শপগুলোতে ইলিশের চড়া দাম দেখা গেছে। তবে আজকালের মধ্যে সাগরে থাকা সব বোট ও ট্রলার কূলে ফিরে এলে সরবরাহ কিছুটা বাড়বে এবং দামও কমে আসতে পারে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

পহেলা বৈশাখের উৎসবের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে অঘোষিতভাবে পান্তাইলিশ উৎসবের অপরিহার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। মাটির সানকিতে পান্তাইলিশ খাওয়া পরিণত হয়েছে ফ্যাশনেআভিজাত্যে। পাঁচতারকা হোটেল থেকে শুরু করে ছোটখাটো রেস্তোরাঁয়ও সকালে পান্তাইলিশের আয়োজন করা হয়। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানস্থলেও চড়া দামে বেচাকেনা চলে ইলিশপান্তার। পুরো বছরে একদিনও পান্তা না খাওয়া হাজারো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েন পহেলা বৈশাখ। পান্তাভাতের সাথে ইলিশ না খেলে অনেকের উৎসবে পূর্ণতা আসে না। এতে করে পহেলা বৈশাখে ইলিশের চাহিদা বহুগুণে বেড়ে যায়। আর এই বাড়তি চাহিদার সুযোগে পুরো বছর চড়া দামে বিক্রি হওয়া ইলিশের গায়ে হাত দেওয়া যায় না। পহেলা বৈশাখের বাজারকে সামনে রেখে আড়তে আড়তে মজুদ করা ইলিশ আকাশচুম্বি দামে বিক্রি হয়। চলে কারসাজিও। দর বাড়ানোর জন্য চলে সংঘবদ্ধ চক্রের বাজার কারসাজি।

অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরও একই ধাঁচে ইলিশের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে এবার নতুন সংকট হচ্ছে সাগরনদীতে ইলিশ কম ধরা পড়া।

চট্টগ্রামের একাধিক বোট মালিক গতকাল আজাদীকে জানিয়েছেনমাছের পরিমাণ খুবই কম। জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম প্রভাবে সাগরে ইলিশের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। চৈত্র মাসে ঝড়বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশের ঝাঁক নদীতে উঠে আসেনিযা সরবরাহ কমার প্রধান কারণ বলে তারা জানান।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানানবর্তমানে ইলিশ ধরা পড়ছে কমফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে। এছাড়া বড় আকারের ইলিশের দেখা মিলছে নাযা জেলেদের হতাশ করছে। মিয়ানমার থেকে কিছু বড় ইলিশ আমদানি হয়েছে বলেও জানান তারা।

চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচাবাজারে বেড়েছে ইলিশের দাম। বাজারে দেশিবিদেশি এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দরে। কাজীর দেউড়ি এবং কর্ণফুলী বাজারে গতকাল ইলিশের চড়া দাম হাঁকতে দেখা গেছে। দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা দরে। তবে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনো ক্রেতাকে এসব মাছ কিনতে দেখা যায়নি।

সুপার শপেও ইলিশের দাম বাড়তি। গতকাল নগরীর একাধিক সুপার শপ ঘুরে দেখা গেছে৪শ গ্রাম ওজনের জাটকা ১৭৫০ টাকা৬শ গ্রাম ওজনের মাছ ২৪৫০ টাকা এবং ১২শ থেকে ১৪শ গ্রাম ওজনের মাছের দর দেখা গেছে ২৬৪৯ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেনসাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০০৮০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টনসেখানে ২০২৩২৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৯ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে বছরজুড়ে। নববর্ষের আয়োজনেও ইলিশ যথারীতি বহু মানুষের পাতে উঠবে না বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

ইলিশ শিকারের একাধিক বোটের মালিক মোহাম্মদ কামরুল জানানআগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিনের জন্য মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে। আজকালের মধ্যে সাগরে থাকা সব বোট ফিরে আসবে। এগুলো এলে বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়বে। দামও কমে যেতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Search This Blog

Powered by Blogger.